ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানকে বরণ করতে প্রস্তুত হাজারো দর্শক

ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানকে বরণ করতে প্রস্তুত হাজারো দর্শক


 ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিকনদীর ধারে শতবছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী রাজাটংকনার্থ চৌধুরীর দৃষ্টিনন্দন রাজবাড়িতে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এ অনুষ্ঠানকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

অপরদিকে রাণীশংকৈলে এবারই প্রথম ইত্যাদির আয়োজন করায় অনুষ্ঠানটিকে বরণ করতে পুরো জেলার হাজার হাজার দর্শক আগ্রহে দিন গুনছে।


অনুষ্ঠান ঘিরে উপজেলা জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ তেমনি প্রশাসনও নিরপত্তার চাদরে ঘিরে রাখতে তৈরি করেছে রোডম্যাপ। এবারে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে রাণীশংকৈলের ইতিহাস, ঐতিহ্য রামরাইদিঘী, গোরখোনাথের গরকই কুপ, জগদল জমিদারবাড়ি, নৃত্যানুষ্ঠান, কৌতুক অভিনয়সহ প্রাকৃতিক বৈচিত্রময় বিভিন্ন নিদর্শন। কয়েদিন ধরে রাজবাড়ির আঙ্গিনায় চলছে মাঠ সাজানোর প্রস্তুতি আগামীকাল প্রদর্শিত হবে অনুষ্ঠান। উপলক্ষে প্রশাসন কয়েকটিস্থরে তৈরি করেছে নিরাপত্তার বেষ্টনি, মোতায়েন করা হবে সেনাবহিনী,পুলিশ ও আনসার।

ইতোমধ্যে অনুষ্ঠাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বহি কর্মকর্তা রকিবুল হাসান, সেনাবাহিনীর ল্যাপ্টেন মেহেদি হাসান, থানা অফিসার ইনচার্জ আরশেদুল হক, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ইকবাল হোসেন প্রামানিক (ডিআইও ওয়ান)।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, ইত্যাদি অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রশাসনিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জনসমাগম এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ মোড়ে মোড়ে অবস্থান করবে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি স্থরে মোতায়েন করা হবে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার।

রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৫

রংপুর বিভাগের ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান ও তথ্য সমূহ

রংপুর বিভাগের ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান ও তথ্য সমূহ


 বাংলাদেশের আটটি বিভাগের মধ্যে রংপুর বিভাগ একটি। বিভাগটির মোট আয়তন প্রায় ১০,৯২৮ বর্গ কিলোমিটার এবং এটি দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এবং উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বে ভারত এবং দক্ষিণে রাজশাহী বিভাগ দ্বারা সীমানা। এটি ২৫ জানুয়ারী ২০১০ সালে বাংলাদেশের ৭ তম বিভাগ হিসাবে গঠিত হয়। এর আগে এটি ছিল রাজশাহী বিভাগের অধীনে। রংপুর বাংলাদেশের উত্তরের বিভাগ। এই নতুন বিভাগের প্রধান শহরগুলো হলো রংপুর, সৈয়দপুর ও দিনাজপুর।

রংপুর বিভাগ একটি প্রধান কৃষি অঞ্চল এবং এটি ধান, গম, পাট এবং চা উৎপাদনের জন্য পরিচিত। বিভাগটি টেক্সটাইল, চিনি এবং ওষুধ সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের আবাসস্থল। রংপুর বিভাগ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি মহাস্থানগড়ের প্রাচীন শহর, দিনাজপুর জাদুঘর এবং রংপুর চিড়িয়াখানা সহ বহু ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানের আবাসস্থল।

রংপুর বিভাগের ইতিহাস

১৫৭৫ সালে মুঘল সাম্রাজ্য অঞ্চলটি জয় করে এবং রংপুরে একটি সামরিক গ্যারিসন স্থাপন করে। মুঘলরা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে রংপুর শাসন করেছিল, সেই সময়ে অঞ্চলটি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছিল। ১৮ শতকের গোড়ার দিকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং অবশেষে ১৭৬৫ সালে রংপুর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা জয় করা হয়। ব্রিটিশরা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে রংপুর শাসন করে। সেই সময়ে এই অঞ্চলটি আরও অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির অভিজ্ঞতা লাভ করে। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করলে রংপুর পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। তখন থেকেই রংপুর বাংলাদেশের একটি অংশ।

রংপুর বিভাগ একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একটি বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। এই অঞ্চলটি বাঙালি আদিবাসী এবং চাকমা সহ বেশ কয়েকটি জাতিগত গোষ্ঠীর আবাসস্থল। এই অঞ্চলটি ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সহ বেশ কয়েকটি ধর্মের আবাসস্থল। রংপুর একটি প্রাণবন্ত এবং গতিশীল অঞ্চল যেটি বাংলাদেশের উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

রংপুর বিভাগের জেলা সমূহ

বিভাগটি আটটি জেলা নিয়ে গঠিত:

  1. রংপুর জেলা,
  2. গাইবান্ধা জেলা,
  3. নীলফামারী জেলা,
  4. কুড়িগ্রাম জেলা,
  5. লালমনিরহাট জেলা,
  6. দিনাজপুর জেলা,
  7. ঠাকুরগাঁও জেলা,
  8. পঞ্চগড় জেলা।

এখানে রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলা সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য রয়েছে:

রংপুর জেলা

রংপুর জেলা বিভাগীয় সদর দপ্তর এবং বিভাগের বৃহত্তম শহর। এটি একটি প্রধান বাণিজ্যিক ও শিক্ষাকেন্দ্র এবং এটি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল।

গাইবান্ধা জেলা

গাইবান্ধা বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং এটি একটি প্রধান কৃষি ও শিল্প কেন্দ্র। এটি গাইবান্ধা সুগার মিল এবং গাইবান্ধা জুট মিলের বাড়ি।

নীলফামারী জেলা

নীলফামারী একটি প্রধান কৃষিপ্রধান জেলা এবং এটি চা বাগানের জন্য পরিচিত। এটি নীলফামারী পার্বত্য অঞ্চলের আবাসস্থল, যা একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।

কুড়িগ্রাম জেলা

কুড়িগ্রাম একটি প্রধান কৃষি জেলা এবং কুড়িগ্রাম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আবাসস্থল। এটি দুধকুমার নদীর আবাসস্থল, যা মাছ ধরা এবং বোটিং করার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

লালমনিরহাট জেলা

লালমনিরহাট একটি প্রধান কৃষি জেলা এবং লালমনিরহাট দুর্গের আবাসস্থল। এটি ব্রহ্মপুত্র নদেরও আবাসস্থল, যা একটি প্রধান পরিবহন ধমনী।

দিনাজপুর জেলা

দিনাজপুর একটি প্রধান ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এটি দিনাজপুর জাদুঘর এবং দিনাজপুর দুর্গের আবাসস্থল। এটি দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থলও।

ঠাকুরগাঁও জেলা

ঠাকুরগাঁও একটি প্রধান কৃষি জেলা এবং ঠাকুরগাঁও চা বাগানের আবাসস্থল। এটি ঠাকুরগাঁও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আবাসস্থল।

পঞ্চগড় জেলা

পঞ্চগড় একটি প্রধান সীমান্ত জেলা এবং পঞ্চগড় সেনানিবাসের বাড়ি। এটি পঞ্চগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যেরও আবাসস্থল।

রংপুর বিভাগের দর্শনীয় স্থান সমূহ

রংপুর বিভাগে অনেকগুলো পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

তাজহাট প্রাসাদ

এই প্রাসাদটি ১৮ শতকে বাংলার নবাবদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি মুঘল স্থাপত্যের একটি সুন্দর নিদর্শন এবং রংপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।

পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স

এই মন্দির কমপ্লেক্সে ৫০টিরও বেশি মন্দির রয়েছে, যার বেশিরভাগই ১ শতকে নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরগুলি হিন্দু স্থাপত্যের একটি চমৎকার উদাহরণ এবং হিন্দুদের জন্য একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান।

রংপুর চিড়িয়াখানা

এই চিড়িয়াখানায় সিংহ, বাঘ, হাতি এবং বানর সহ ১০০০-এরও বেশি প্রাণীর বাসস্থান। এটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সম্পর্কে জানার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা এবং শিশুদের সাথে পরিবারের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।

কান্তজিউ মন্দির

এই মন্দিরটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। এটি দশম শতাব্দীতে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।

নয়াবাদ মসজিদ

এই মসজিদটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। এটি ১৯ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং ৫০০০ জনেরও বেশি লোক থাকতে পারে।

চান্দামারী মসজিদ

এই মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এটি ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি মুসলমানদের জন্য একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান।

ঠাকুরগাঁও চিনিকল

এই চিনিকলটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি কারখানার ট্যুর এবং বাংলাদেশে চিনি উৎপাদনের ইতিহাসের একটি জাদুঘর অফার করে।

রংপুর বিভাগের অনেকগুলো পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে এগুলো মাত্র কয়েকটি। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে রংপুর ছুটি কাটাতে বা সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে দেখার জন্য একটি চমৎকার জায়গা।

রংপুর বিভাগের মধ্যে পার্ক সমূহ

রংপুর বিভাগে রয়েছে বেশ কিছু পার্ক ও প্রাকৃতিক আকর্ষণ। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু অন্তর্ভুক্ত:

ভিন্নোজগত বিনোদন পার্ক

এটি রংপুর বিভাগের বৃহত্তম বিনোদন পার্ক এবং রংপুর শহরে অবস্থিত। এতে বিভিন্ন ধরনের রাইড, গেমস এবং সব বয়সের মানুষের জন্য আকর্ষণ রয়েছে।

বিনোদন পার্ক এবং রংপুর চিড়িয়াখানা

এই উদ্যানটি রংপুর শহরে অবস্থিত এবং এখানে সিংহ, বাঘ, হাতি এবং বানর সহ বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থান। পার্কে একটি শিশুদের খেলার মাঠ এবং একটি হ্রদও রয়েছে।

ফানসিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক

এই চিত্তবিনোদন পার্কটি মজা এবং উত্তেজনার দিনের জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা। এটি সব বয়সের জন্য বিভিন্ন রাইড এবং আকর্ষণ রয়েছে।

টাঙ্গন নদী

এই নদীটি রংপুর ও নীলফামারী জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি সাঁতার কাটা, মাছ ধরা এবং বোটিং করার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

রামসাগর জাতীয় উদ্যান

এই জাতীয় উদ্যানটি দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত। এটি বাঘ, হাতি, গন্ডার এবং হরিণ সহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর বাসস্থান।

ড্রিমল্যান্ড

এই বিনোদন পার্কটি গাইবান্ধা জেলায় অবস্থিত। এতে বিভিন্ন ধরনের রাইড, গেমস এবং সব বয়সের মানুষের জন্য আকর্ষণ রয়েছে।

নীলসাগর

নীলফামারী জেলায় এই লেকটি অবস্থিত। এটি সাঁতার, মাছ ধরা এবং বোটিং এর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

রামরাই দীঘি

ঠাকুরগাঁও জেলায় অবস্থিত এই লেকটি। এটি সাঁতার, মাছ ধরা এবং বোটিং এর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

গাইবান্ধা পৌর পার্ক

গাইবান্ধা শহরে এই পার্কটি অবস্থিত। এতে বিভিন্ন ধরনের রাইড, গেমস এবং সব বয়সের মানুষের জন্য আকর্ষণ রয়েছে।

শিশু পার্ক

এই পার্কটি কুড়িগ্রাম শহরে অবস্থিত। এটি সিংহ, বাঘ, হাতি এবং বানর সহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর বাসস্থান। পার্কে শিশুদের খেলার মাঠ এবং একটি লেকও রয়েছে।

চিকলি ভাটা

রংপুর জেলায় অবস্থিত এটি একটি বন। এটি হাইকিং, ক্যাম্পিং এবং পাখি দেখার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

মহারাজার দীঘি

পঞ্চগড় জেলায় এই লেকটি অবস্থিত। এটি সাঁতার, মাছ ধরা এবং বোটিং এর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

সিঁদুর মতির দীঘি

এই লেকটি কুড়িগ্রাম জেলায় অবস্থিত। এটি সাঁতার কাটা, মাছ ধরা এবং বোটিং করার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

সুখসাগর

দিনাজপুর জেলায় এই হ্রদটি অবস্থিত। এটি সাঁতার, মাছ ধরা এবং বোটিং এর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

যে কারণে রংপুর বিভাগ বিখ্যাত

রংপুর বিভাগ নানা কারণে বিখ্যাত, এটি বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতি এবং মানুষের আবাসস্থল। রংপুর বিভাগ বিখ্যাত হওয়ার কিছু কারণ এখানে দেওয়া হল:

  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: রংপুর তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত, এর ঘূর্ণায়মান পাহাড়, লঘু বন, এবং স্বচ্ছ নদী। এই বিভাগটিতে রামসাগর জাতীয় উদ্যান, দুধকুমার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং হিমছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে।
  • ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান: রংপুরে তাজহাট প্রাসাদ, কান্তজিউ মন্দির এবং দিনাজপুর মিউজিয়ামের মতো অনেক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে। তাজহাট প্রাসাদ একটি ১৭ শতকের প্রাসাদ যা মুঘলদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। কান্তজিউ মন্দির হল ১২ শতকের একটি হিন্দু মন্দির যা দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। দিনাজপুর জাদুঘরে এই অঞ্চলের ইতিহাসের নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়েছে।
  • বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি: রংপুর বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি ও মানুষের আবাসস্থল। এই বিভাগটি বাঙালি, আদিবাসী এবং চাকমা সহ বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর লোকদের বাসস্থান। রংপুর মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর আবাসস্থল।
  • অর্থনৈতিক গুরুত্ব: বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র রংপুর। বিভাগটি কৃষি, উত্পাদন এবং পর্যটন সহ বেশ কয়েকটি শিল্পের আবাসস্থল। রংপুরে কারমাইকেল কলেজ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল।

রংপুর বিভাগ একটি প্রাণবন্ত ও বৈচিত্র্যময় অঞ্চল যা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির আবাসস্থল। বিভাগটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্রও বটে।

ঠাকুরগাঁও জেলার তথ্য, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান সমূহ

ঠাকুরগাঁও জেলার তথ্য, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান সমূহ


বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ঠাকুরগাঁও  জেলা। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪৬৭ কিলোমিটার দূরে। 

এটির দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা, পূর্বে পঞ্চগড় জেলা এবং এর পশ্চিম ও উত্তর দিকে ভারত বেষ্টিত এটি হিমালয়ের সমতল ভূমির একটি অংশ। 

ঠাকুরগাঁও ১৮৬০ সালে ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, হরিপুর ও রুহিয়া নামে ৬টি থানার সমন্বয়ে একটি মহাকুমা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে এটি জলপাইগুড়ির ৩টি থানা এবং ভারতের কোচবিহারের একটি থানা সহ একটি মহাকুমা হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে আটোয়ারীকে নতুন পঞ্চগড় জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এলাকাটি মাত্র ৫টি থানার মধ্যে সংকুচিত হয়। তারপর ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সালে এটি একটি জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

 ঠাকুরগাঁও মূলত কৃষিপ্রধান জেলা। জেলায় উৎপাদিত প্রধান ফসল হল ধান, গম, ভুট্টা, পাট ও আলু। এছাড়াও জেলাটিতে বেশ কয়েকটি চা বাগান রয়েছে। জেলার পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে ঠাকুরগাঁও কেল্লা, রানীশংকৈল রাজবাড়ী, হরিপুর উপজেলা পার্ক এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা উদ্যান।

ঠাকুরগাঁও নামকরণ ও জেলার ইতিহাস

ঠাকুরগাঁও জেলার নামকরণ করা হয়েছিল বরুণ ঠাকুর একজন মৈথিল ব্রাহ্মণ যিনি অষ্টাদশ শতকে এই অঞ্চল শাসন করেছিলেন। ১৮৭৯ সালের আগে ঠাকুরগাঁও বিকাশ ঝা, বরুণ ঠাকুর এবং বিধানেশ রায় সহ বিভিন্ন হিন্দু জমিদার দ্বারা শাসিত ছিল। ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঠাকুরগাঁওয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সেখানে একটি তহসিল (একটি জেলা মহকুমা) প্রতিষ্ঠা করে। তহসিলটি প্রাথমিকভাবে দিনাজপুর জেলার অংশ ছিল কিন্তু ১৯৮৪ সালে এটি দিনাজপুর থেকে পৃথক হয়ে একটি পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

বর্তমানে ঠাকুরগাঁও বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের একটি জেলা। এটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এবং পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলা/থানা সমূহ

ঠাকুরগাঁও জেলায় ৫টি থানা বা উপজেলা রয়েছে। যা হল:
  1. ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা,
  2. বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা,
  3. পীরগঞ্জ উপজেলা,
  4. রানীশংকৈল উপজেলা,
  5. হরিপুর উপজেলা।

ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার কিছু পর্যটন/দর্শনীয় স্থান গুলোর মধে রয়েছে:

কান্তনগর মন্দির

ষোড়শ শতাব্দীর এই মন্দিরটি ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। এটি একটি হিন্দু মন্দির যা দেবী কালীকে নিবেদিত। এটি ঠাকুরগাঁও জেলার মোদেরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

টাঙ্গন নদী

টাঙ্গন নদী ঠাকুরগাঁও জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি বড় নদী। নদীটি বোটিং, মাছ ধরা এবং সাঁতারের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এটি মাছ, পাখি এবং কুমির সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

রানীশংকৈল রাজবাড়ী

১৯ শতকের এই প্রাসাদটি রানীশঙ্কর রায় পরিবারের সাবেক বাসভবন। প্রাসাদটি ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলায় অবস্থিত এটি এখন একটি জাদুঘর যেখানে রায় পরিবারের নিদর্শন এবং ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস প্রদর্শিত হয়।

গোর্খাই হেরিটেজ

এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি মসজিদ একটি মন্দির এবং একটি জলকল সহ পুরানো ভবনগুলির একটি সংগ্রহ। এটি ইতিহাস উৎসাহিত এবং ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা।

রামরাই দিঘী

ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলায় এই পুকুরটি অবস্থিত। এটি বোটিং, মাছ ধরা এবং সাঁতারের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এছাড়াও পুকুরটি মাছ, পাখি এবং কচ্ছপ সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

প্রেমবাগান

ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলায় এই বাগানটি অবস্থিত। এটি পিকনিক, ঘোরাঘুরি এবং পাখি দেখার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। বাগানটি বিভিন্ন ফুল, গাছপালা এবং গাছের আবাসস্থল।

বোলাকা উদ্যান

ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলায় এই জাতীয় উদ্যানটি অবস্থিত। এটি পাখি পর্যবেক্ষন, হাইকিং এবং ক্যাম্পিং এর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। পার্কটি পাখি, হরিণ এবং বানর সহ বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

ঠাকুরগাঁও জেলার পাবলিক পার্ক সমূহ

ঠাকুরগাঁও জেলার কিছু পাবলিক পার্ক গুলোর মধ্যে রয়েছে:

ডিসি ট্যুরিজম পার্ক

ঠাকুরগাঁও শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই পার্কটি স্থানীয় ও পর্যটকদের কাছে একইভাবে একটি জনপ্রিয় স্থান। এটিতে একটি হ্রদ, একটি খেলার মাঠ, একটি চিড়িয়াখানা এবং বেশ কয়েকটি রেস্তোঁরা এবং দোকান সহ বিভিন্ন ধরণের আকর্ষণ রয়েছে৷

প্রেম রোড

এই রাস্তাটি গাছ এবং ফুলের সাথে সারিবদ্ধ, এটিকে হাঁটার জন্য বা সাইকেল চালানোর জন্য একটি মনোরম জায়গা করে তোলে। এটি বেশ কয়েকটি ছোট দোকান ও রেস্তোরাঁর আবাসস্থল।

টিজিসি পার্ক

এই পার্কটি ঠাকুরগাঁও শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত এবং এটি পিকনিক ও পারিবারিক বেড়াতে যাওয়ার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এটিতে একটি বড় খেলার মাঠ, একটি হ্রদ ও বেশ কয়েকটি খোলা জায়গা রয়েছে।

যে কারনে ঠাকুরগাঁও জেলা বিখ্যাত

ঠাকুরগাঁও জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং তার বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষদের জন্য বিখ্যাত। জেলাটি বিখ্যাত হওয়ার মধ্যে কয়েকটি এখানে রয়েছে:
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: ঠাকুরগাঁও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ও এটি তার সবুজ পাহাড় তার ঘূর্ণিঝড় নদী এবং এর সুন্দর বনের জন্য পরিচিত। এছাড়াও জেলাটিতে দুধকুমার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ফুলবাড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সহ বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে।
  • সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি: ঠাকুরগাঁওয়ের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতি রয়েছে যা বহু শতাব্দী আগের। জেলাটি হরিপুর দুর্গ এবং রানীশংকৈল প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ সহ অনেক ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষের আবাসস্থল। ঠাকুরগাঁও বার্ষিক রামরাই মেলা ও বার্ষিক গোরোক্ষনাথ মেলা সহ বেশ কয়েকটি উৎসবের আবাসস্থল।
  • বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ: ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ তাদের আতিথেয়তা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের জন্য পরিচিত। ঠাকুরগাঁওয়ের দর্শনার্থীদের সর্বদা খোলা বাহু দিয়ে স্বাগত জানানো হয় ও তাদের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা হয়।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলাটি একটি চমৎকার জায়গা।