মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২৫

হাসিনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও তাকে দেশে পাঠানো নিয়ে ভারতীয় কূটনীতিকের মন্তব্য


 ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গুমের অভিযোগে দ্বিতীয় যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, এর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি। তিনি এসব অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা ও যথাযথ প্রমাণের বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তথ্য-প্রমাণের অভাবের ওপর জোর দিয়েছেন।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই কূটনীতিক আরও উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায়নি।

এএনআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বীণা সিক্রি বলেন, ‘এটি (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এটি (জোরপূর্বকভাবে) গুমের অভিযোগে...যদি আপনি প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা বলেন, তা ছিল তথাকথিত গণহত্যার অভিযোগে। কিন্তু কোনো প্রমাণ বা তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। যখন জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনকে জুলাই-আগস্টে প্রাণ হারানো মানুষের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়, তারা বলে যে আমাদের কোনো প্রমাণ দেয়া হয়নি...কোনো এফআইআর কি আছে? এফআইআরে কী লেখা আছে? কী প্রমাণ আছে? এমন কিছুই তো নেই...!’

বীণা সিক্রি আরও বলেন, ‘প্রত্যর্পণের আবেদনের বিষয়টি একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। যেসব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, সেসব প্রমাণ আপনাকে দিতে হবে...কিন্তু এসব কিছুই করা হয়নি। এখন, গুমের অভিযোগের ক্ষেত্রে শুধু আপনি যেনতেন উপায়ে কয়েকজনের নাম দিয়ে বলছেন, গুম হয়েছে। (এলিট ফোর্স) র‍্যাব এসব গুমের জন্য দায়ী এবং অভিযুক্ত।’

র‍্যাব গঠনের প্রসঙ্গে টেনে এই কূটনীতিক বলেন, ‘এটি বেগম খালেদা জিয়ার মেয়াদকালে যাত্রা শুরু করেছিল এবং তখন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ উঠেছে যে তারা নাগরিকদের (জোরপূর্বক) তুলে নিয়ে যায়, গুম করে ফেলে। তারপর থেকে এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখন হঠাৎ এটি নিয়ে মামলা করা হয় এবং ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আমি মনে করি না যে, এই মামলাগুলো কোনো গুরুত্ব বহন করে।’

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: ভারতে পালিয়ে যাওয়া তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সোমবার (৬ জানুয়ারি) দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জোরপূর্বক অপহরণ এবং গুমের ঘটনায় করা মামলার প্রেক্ষিতে সকালে এই আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। যথার্থ ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন তারা। পাশাপাশি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) গ্রেপ্তারের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ওই ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করে হাজির করার নির্দেশও দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। 

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেই পরোয়ানায় তাকে গত বছরের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর, আজ ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যেখানে তাকে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের মধ্যে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


শেয়ার করুন

Author:

দৈনিক আজকের ঠাকুরগাঁও.কম একটি জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল। নির্ভীক, অনুসন্ধানী, তথ্যবহুল ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হয়েছে।

0 coment rios: